আলুবোখারার পুষ্টিগুণ

Pickles আলুবোখারার পুষ্টিগুণ6704 Views

ছোট্ট একটি ফলের নাম আলুবোখারা। টক মিষ্টি স্বাদের মাংসালো এই ফলটি খেতে খুবই সুস্বাদু। 

চাষের ভিন্নতায় আলুবোখারার রঙ ভিন্ন হয়ে থাকে, যেমন- লাল, কফি, গাঢ় নীল, ম্যাজেন্টা, হলুদ এবং হালকা সবুজ। ফলটি সাধারণত গোলাকৃতির হয়, মাঝে মাঝে হৃদয়াকৃতিরও পাওয়া যায়। আমরা সাধারণত আলুবোখারা বলতে যেটা পাই সেটা ফলটির শুকনো রূপ। এটা খেতে খুবেই সুস্বাদু। খাবারের স্বাদ বাড়াতেও মসলা হিসেবে এর জুড়ি নেই। শুধু কি তাই, ফলটিতে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান।

কেন খাবেন আলুবোখারা?

জুলাই থেকে অক্টোবর এই ফলের মৌসুম। ছোট, লম্বাটে ফলটিতে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন ও আঁশ, যা একজন সুস্থ মানুষের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে আলুবোখারার আছে ভিটামিন এ, সি এবং ই। এতে ভিটামিন ‘বি’ যথেষ্ট পরিমাণে আছে যা নার্ভের জন্য খুবই উপকারী। এটি মানসিক চাপ দূরে রাখতেও সহায়তা করে।

গড়ে ১০০ গ্রাম আলুবোখারায় রয়েছে মাত্র ৫০ গ্রাম ক্যালরি, যা ফিগার সচেতনদের জন্যও উপযুক্ত। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আলু বোখারার জুড়ি নেই। আকারে ছোট ও হালকা হওয়ায়  সংগ্রহে রাখতে পারেন এ ফল। সুলভ হওয়ায় আলুবোখারা সর্বত্রই পাওয়া যায়।

চোখের যত্নঃ

ভিটামিন এ এর জন্য আলুবোখারা খুব ভালো একটি উৎস। চোখের দৃষ্টি ভালো রাখতে ভিটামিন এ সক্রিয় ভূমিকা রাখে। চোখের অন্যান্য রোগ দমনেও কাজ করে। তাই আলু বোখারার খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। 

হজম বৃদ্ধিঃ

আলুবোখারায় উপস্থিত পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যআঁশ আপনার হজম বাড়িয়ে খাবারের রুচি বৃদ্ধি করে। পেটের রোগ দমনেও সাহায্য করে থাকে আলু বোখারার আচার। 

লৌহ কণিকা বৃদ্ধিঃ

এতে উপস্থিত লৌহ শরীরে রক্ত বাড়াতে সক্ষম। নিয়মিত আলু বোখারার  আচার খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। যাদের প্রয়োজনের তুলনায় রক্ত উৎপাদন কম হয় বা যেকোনো কারণে রক্তশূন্যতা হয় তবে নিয়মিত কিছুদিন আলুবোখারা খেতে পারেন। 

রক্তচাপ রোধঃ

আলুবোখারায় থাকা ভিটামিন কে রক্তের যেকোনো রোগ দমনে সহায়তা করে। উচ্চরক্তচাপ রোধ, স্ট্রোক থামানো এবং রক্তের সরল গতি নিশ্চিত করে। 

হৃদযন্ত্রের সুস্থতাঃ

হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় আলুবোখারার তুলনা হয় না। এটি অতি উচ্চ গুণ সম্পন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বহন করে। দেহের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল তাড়িয়ে আপনাকে সুস্থ করতে আলুবোখারার তুলনা হয় না। 

বয়সের ছাপ দূরঃ

প্রকৃত বয়সের চেয়ে বেশি বয়স দেখানো, চামড়া কুচকে যাওয়া এবং চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট হওয়া মোটেও কাম্য নয়। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে নিয়মিত আলুবোখারা খেতে পারেন। আপনাকে সুন্দর সতেজ রাখতে আলুবোখারার কোনো তুলনা হয় না। এমনকি ত্বক এবং চুলের যত্নেও আলুবোখারা সেরা। 

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাসঃ

এই ফলটিতে উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ি কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। যেকোনো ক্যানসারের জীবাণুর বৃদ্ধিও ঠেকাতে সক্ষম আলুবোখারায় উপস্থিত এই উপাদান। 

হাড়ের গঠনঃ

বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে নিয়মিত ফলটি খেলে হাড়ের গঠন, সুস্থতা এবং বিশেষভাবে মেনোপোজে যাওয়া নারীদের হাড়ের যত্ন নিশ্চিত হয়। হাড়ের ভঙ্গুরতা কাটিয়ে মজবুত কাঠামো গঠনে আলুবোখারা খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।

রোগ প্রতিরোধঃ

আলুবোখারায় পাওয়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। যখন তখন রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকেও বাঁচাতে পারে আলুবোখারা।   

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিঃ

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে আলুবোখারার রয়েছে দারুণ সক্ষমতা। পড়ুয়া ছাত্রদের জন্য তাই নিয়মিত আলুবোখারা খাওয়া ভালো। এতে পড়া দ্রুত মুখস্থ হওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

শেষ কথা

খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে কিংবা আপনার প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে আলুবোখারার ভূমিকা অতুলনীয়। এটি সহজলভ্য এবং সারা বছর ধরে সংরক্ষণযোগ্য হওয়ায় আপনি সহজেই এটি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততার মাঝে সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য নির্বাচন অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এই ক্ষুদ্র কিন্তু পুষ্টিগুণে ভরা ফলটি আপনার ডায়েটের অংশ হলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।

Recent Posts

Savory 31 Views

নিয়মিত ঘি খাওয়ার উপকারিতা

ঘি হজমশক্তি বাড়ায়, ওজন কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা উন্নত করে, এবং ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী। এটি ভাত, রুটি, ডাল ও মিষ্টান্নে স্বাদ বাড়ায় ও পুষ্টি যোগ করে। ঘি এর পুষ্টিগুনাগুণ পেতে পরিমিত পরিমাণে ঘি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

Pickles 205 Views

সহজেই জলপাই এর টক-ঝাল-মিষ্টি আচার তৈরির রেসিপি (Olive Pickle Recipe)

জলপাইয়ের টক-ঝাল-মিষ্টি আচার খুব সহজে তৈরি করা যায় এবং এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। আচার তৈরি করতে ১ কেজি জলপাই, সরিষার তেল, তেজপাতা, শুকনা মরিচ, পাঁচফোড়ন, চিনি, লবণ এবং ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।