ছোটবেলায় বৃষ্টি নামলেই খিচুড়ির জন্য মায়ের পেছনে ঘুরঘুর করা ছিল আমাদের অনেকেরই প্রিয় অভ্যাস। আবদার রাখতে মা চুলায় খিচুড়ি বসাতো আর আমরা এটা সেটা প্রশ্ন জুড়ে দিতাম।
মাঝেমধ্যে প্রশ্ন শুনে মা দিত মেকি ঝারি। কোনো রেসিপি ছাড়াই কীভাবে যেন অল্প সময়ে তৈরি হয়ে যেত মায়ের হাতের ভীষণ প্রিয় খিচুড়ি। তারপর গরম গরম খিচুড়ির সাথে মা দিত কাঁচের বয়ামে যত্নে রাখা নানান স্বাদের আঁচার। আহ্ কি আদর জড়ানো সময় ছিল সেটা।
বড়বেলায় এসে নানান ব্যস্ততায় খুব আয়োজন করে খিচুড়ি রান্না করাটা যেন আর হয়ে উঠে না। হাতের কাছে থাকা উপকরণ দিয়েই ঝটপট বানিয়ে ফেলা খিচুড়ির রেসিপিই যেন বেশি আরামের মনে হয়। আসুন তাহলে জেনে নেই ঝরঝরে খিচুড়ি রান্নার সহজ একটা রেসিপি।
খিচুড়ি রান্নার উপকরণ
খিচুড়ি রান্নার জন্য হাতের নাগালে পাওয়া যায় এমন উপকরণগুলো হলঃ
- এলাচ: ৩ টি
- দারুচিনি (টুকরো): ২ টি
- তেজপাতা: ১ টি
- সরিষার তেল: আধা কাপ
- পেঁয়াজ কুঁচি: আধা কাপ
- আদা বাটা: ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা: ১ টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়া: ১ চা চামচ
- মরিচ গুড়া: ১ চা চামচ
- চাল: ৩ কাপ
- মসুর ডাল: ১ কাপ
- কাঁচা মরিচ: ৫/৬ টি
- লবণ: স্বাদমতো
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে একটি প্যানে সরিষার তেল দিন। তেল গরম হলে দিন তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি। এবার অপেক্ষা করুন ফ্লেভার ছড়ানোর জন্য। তারপর পেঁয়াজ কুঁচি ছড়িয়ে দিন।
পেঁয়াজে বেরেস্তার রঙ চলে আসলে আধা কাপ নরমাল পানি দিয়ে দিন। এরপর আদা ও রসুন বাটা মিশিয়ে দিন। এরপর একে একে সব গুড়া মসলা ও লবণ দিয়ে আরও ৫-৭ মিনিটের মতো নাড়ুন। এরপর আগে থেকে ধুয়ে রাখা চাল ও ডাল দিয়ে দিন।
চাল ও ডাল মশলার সাথে মিশিয়ে অপেক্ষা করুন আরও ৮-১০ মিনিট। এবারে পরিমাণমতো গরম পানি ঢেলে দিন চাল, ডাল সিদ্ধ হওয়ার জন্য। চুলার আঁচ মিডিয়ামে রাখুন ১৫ মিনিটের জন্য।
কাঁচা মরিচগুলোর মাথা ভেঙে নিন। পানি হালকা কমে যাওয়া অবস্থায় কাঁচা মরিচগুলো মিশিয়ে দিন। এতে মরিচের সুগন্ধ খিচুড়িতে ছড়িয়ে যাবে। এরপর খিচুড়ি হালকা নেড়েচেড়ে ঘি ছড়িয়ে দিন। অল্প আঁচে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দমে রেখে দিন আরও ৮-১০ মিনিট।
এবার আপনি যদি ঝালপ্রেমী হয়ে থাকেন, এক চামচ বোম্বাই মরিচের আচার দমে রাখা অবস্থায় খিচুড়িতে মিশিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া রসুন তো এমনিই হার্টের জন্য ভালো। চাইলে রসুনের আচার-ও ছড়িয়ে দিতে পারেন দুই চামচ। এতে সাধারণ খিচুড়িতে যোগ হবে অনন্য স্বাদ ও ঘ্রাণ।
সবশেষে শুকনো মরিচ ও ধনেপাতা ছড়িয়ে গরম গরম খিচুড়ি পরিবেশন করুন।
শীত, গ্রীষ্ম, কিংবা বর্ষা যাই আসুক, এই সুস্বাদু খিচুড়ি খেতে খেতে হারিয়ে যান ছোটবেলার পুরোনো প্রিয় মুহুর্তে।