প্রাচীনকাল থেকেই রসুন এর বৈচিত্র্য স্বাদ ও পুষ্টিগুনাগুণের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। প্রতিদিনের খাবারে এর নিয়মিত ব্যবহার দেখলেই বোঝা যায় যে রান্নায় এর প্রাধান্যতা আমাদের কাছে কতটা বেশি।
রসুন বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের সমৃদ্ধ উৎস, যার মধ্যে আছে ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন), ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন), ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন), ভিটামিন বি৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড), ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি৯ (ফোলেট) এবং সেলেনিয়াম। এই সব উপাদান রসুনকে ক্যানসার প্রতিরোধী হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করে।
রসুনের প্রধান উপাদান, অ্যালিসিন, একটি সক্রিয় যৌগ, যা ক্যানসার সহ বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। আর এই কারণেই রসুনকে এক ধরনের সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক রসুনের অজানা সব পুষ্টিগুনাগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা:
রসুন পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে পারে। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, বি৬, ম্যাঙ্গানিজ ও সেলেনিয়াম। এসব উপাদান ইমিউনিটি বাড়াতে অবদান রাখে। নিয়মিত রসুন খেলে সর্দি ও ফ্লু দূরে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৪৬ জনের ওপর চালানো এক গবেষণায় যাঁরা প্রতিদিন রসুনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন, তাঁদের ঠান্ডা-সর্দি লাগার হার ৬৩ শতাংশ কম।
রসুন অনেক রোগ থেকে দূরে রাখতে পারে। এটি ক্যানসার, ডায়াবেটিস, বিষণ্নতার মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা রসুন খেলে তাঁদের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে থাকা অ্যালিসিন যৌগ সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন ৩-৪টি রসুন চিবিয়ে খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কাঁচা রসুন কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমাতে পারে। এটি টোটাল কোলেস্টেরল ও এলডিএল কোলেস্টেরল (যাকে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল বলা হয়) কমাতে সাহায্য করে এবং সম্ভাব্যভাবে এইচডিএল কোলেস্টেরল (যাকে ‘ভালো’ কোলেস্টেরল বলা হয়) বাড়িয় দেয়।
রসুনে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। রসুনে থাকা অ্যালিসিন বিভিন্ন রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দেয়। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং অসুস্থতার তীব্রতা কমিয়ে দেয়। রসুনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো খুবই কার্যকর। রসুন সালমোনেলা এবং ই. কোলাইয়ের মতো খাদ্যজনিত রোগজীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ এমন একটি রোগ, যেটি নিয়ন্ত্রণ না করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। রসুন উচ্চ রক্তচাপ খুব দারুণভাবে কমাতে পারে। কাঁচা রসুনের প্রধান রাসায়নিক উপাদান অ্যালিসিন, যা রক্তনালিগুলো শিথিল করতে ও রক্তপ্রবাহ উন্নত করতে সহায়তা করে।
যারা যৌন সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন রাতে রসুন খেলে ভালো ফল পেতে পারেন। বিভিন্ন হরমোনাল অসামঞ্জস্যতা প্রতিরোধ করার সাথে সাথে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। মেনোপজের সময় রসুন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
রসুনে থাকা নানান উপাদান পুরুষদের ফার্টিলিটির সমস্যা ঠিক করতে সাহায্য করে। এটি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায় এবং শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে রসুন খুবই উপকারী।
রসুনের সালফার যৌগ শরীরকে টক্সিন (বিষাক্ত বর্জ্য) দূর করতে সাহায্য করে। রক্তে থাকা সিসার মাত্রাও কমাতে পারে রসুন। এর ডিটক্সিফাইংয়ের প্রভাবে গ্লুটাথিয়নের উৎপাদন বাড়ে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা যকৃৎকে বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণে সাহায্য করে।
আপনার যদি যক্ষ্মা বা টিবি জাতীয় কোন সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে সারাদিনে একটি সম্পূর্ণ রসুন কয়েক অংশে বিভক্ত করে বার বার খেতে পারেন। এতে আপনার যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে সহায়তা পাবেন।
খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে যকৃত এবং মূত্রাশয় সঠিকভাবে নিজ নিজ কার্য সম্পাদন করে। এছাড়াও, এর ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়, যেমন- ডায়রিয়া। এটা হজম ও ক্ষুধার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এটি স্ট্রেস দূর করতেও সক্ষম। স্ট্রেস বা চাপের কারনে আমাদের গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যায় পরতে হয়। তাই খালি পেটে রসুন খেলে এটি আমাদের স্নায়বিক চাপ কমিয়ে এ সকল সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
রসুন যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের কনজেশন, হাপানি, হুপিং কাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। রসুন এ সকল রোগ আরোগ্যের মাধ্যমে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
১। গর্ভাবস্থায় রসুন না খাওয়া ভালো।
২। ডায়রিয়া, বমি বা বুকে জ্বালাপোড়া হলে রসুন খাওয়া উচিত নয়।
৩। অনেকের রসুন খেলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এসকল মানুষের জন্য রসুন না খাওয়াই শ্রেয়।
রসুন বাংলাদেশের দৈনন্দিন খাবারে ব্যবহৃত কমন একটি উপাদান। নিচে কিছু দেশি খাবারের তালিকা উল্লেখ করা হল, যেখানে রসুনের ব্যবহার অপরিহার্য:
১। মুরগির তরকারি: মুরগির তরকারিতে কাঁচা রসুন বেটে বা কুচি করে যোগ করলে এর স্বাদ এবং গন্ধ বেড়ে আরও সুস্বাদু হয়। রসুনের ঝাঁঝালো স্বাদ মাংসের সঙ্গে মিশে স্বাদে আনে বিচিত্রতা।
২। মাছের ঝোল: রসুন প্রায় সব ধরনের মাছের ঝোলে ব্যবহার করা যায়। এতে রান্নার সময় কাঁচা রসুন বা বাটা রসুন যোগ করা হয়, যা মাছের স্বাদ এবং খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়ায়।
৩। আচার: আমাদের দেশের মায়েরা অথবা দাদি-নানিরা প্রতি বছরেই রসুনের আচার তৈরি করে থাকে যা অনেকেই রেগুলার খাবারের সঙ্গে খেতে পছন্দ করেন।
৪। ডাল: ডাল রান্নায় রসুন ভেজে বা কাঁচা রসুন কুচি করে ব্যবহার করা হয়, যা ডালের স্বাদে ভিন্নতা যোগ করে।
৫। ভর্তা: আলু, বেগুন, শাকের চচ্চড়ি বা টমেটোর ভর্তায় রসুন পিষে বা কুচি করে মিশিয়ে দিলে ভর্তার স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
৬। পোলাও ও বিরিয়ানি: বাংলাদেশি পোলাও ও বিরিয়ানিতে রসুন সবসময়ই মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রসুনের মশলা পোলাও এবং বিরিয়ানির সাথে মিশে এক অপূর্ব সুগন্ধি স্বাদ সৃষ্টি করে।
৭। নানা প্রকারের শাক ও সবজি ভাজি: শাক, ফুলকপি, মুলা, লাউ ইত্যাদি সবজি ভাজিতে রসুন ব্যবহার খুবই প্রচলিত। এতে স্বাদ বাড়ার পাশাপাশি খাবারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
৮। গরুর মাংসের রেজালা ও ভুনা: গরুর মাংস রান্নায়ও রসুন ব্যবহৃত হয় মশলা হিসেবে, যা মাংসের সাথে মিশে এক ধরণের ঝাঁঝালো ঘ্রাণ তৈরি করে।
৯। গার্লিক মেয়োনিজ ডিপ: গার্লিক মেয়োনিজ ডিপিং সস সাধারণত মশলাদার বা ফ্রাইড খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয়। এটি বিভিন্ন রকম ভাজাপোড়া আইটেম অথবা শর্মা, বার্গার, পিজ্জা, ফ্রাইড চিকেন, কাবাবসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের সাথে খাওয়া যায়, যা স্বাদে একটি ক্রিমি এবং গার্লিকি ফ্লেভার যোগ করে।
রসুনের উপকারিতা পেতে উল্লিখিত সতর্কতাগুলো মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণে রসুন খাওয়া শুরু করুন এবং সুস্থ থাকুন।
Share - Facebook
ঘি হজমশক্তি বাড়ায়, ওজন কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা উন্নত করে, এবং ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী। এটি ভাত, রুটি, ডাল ও মিষ্টান্নে স্বাদ বাড়ায় ও পুষ্টি যোগ করে। ঘি এর পুষ্টিগুনাগুণ পেতে পরিমিত পরিমাণে ঘি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
জলপাইয়ের টক-ঝাল-মিষ্টি আচার খুব সহজে তৈরি করা যায় এবং এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। আচার তৈরি করতে ১ কেজি জলপাই, সরিষার তেল, তেজপাতা, শুকনা মরিচ, পাঁচফোড়ন, চিনি, লবণ এবং ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।