বাংলার খাদ্যাভ্যাসে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে ঘি। পোলাও, বিরিয়ানী বা কাচ্চির মত বিভিন্ন মুখরোচক রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে বিশেষ উপকরণ এই ঘি। ঘি এর উপস্থিতিতে অনেকে তো অন্য কোনো পদের রান্নায় তাকানই না। বরং গরম ভাতের সাথে শুধু ঘি দিয়েই পুরো খাওয়া সেরে ফেলেন ভীষণ তৃপ্তিতে।
আর খাওয়া শেষে বাঙালির পাতে যদি মিষ্টি কিছু যোগ হয়, তাও যেন অসম্পূর্ণ ঘি এর ঘ্রাণ ছাড়া। তাই, মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতেও লাগে ঘি। তবে শুধু স্বাদ বাড়াতেই নয়, ঘি এর রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতাও। বাচ্চাদের থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য ঘি হতে। আজকের লেখায় আসুন জেনে নেই ঘিয়ের বিভিন্ন রকম পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
ঘিয়ের পুষ্টিগুণের জন্যই একে বলা হয় সুপারফুড। দুধ থেকে তৈরি বলে এতে থাকে ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন ডি, কে, ই এবং এ সহ দুধের সব পুষ্টিগুণ। যা আমাদের শরীরকে অন্যান্য খাবার থেকে মিনারেলস ও ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
দেশি ঘি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ভাইরাস, ফ্লু, কাশি, সর্দি প্রভৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে। আসুন ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আরেকটু স্পষ্ট ধারণা নিয়ে আসি-
ঘি আমাদের পাকস্থলির হজম ক্ষমতা বাড়ায়। স্টোমাক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ঘি খেলে তাই বদ-হজম এবং গ্যাস হওয়ার প্রবণতা কমে। কারণ ঘি যে কোনো ধরনের রিচ খাবারকে দ্রুত হজম করাতে সক্ষম।
প্রতিদিন ঘি খেলে শরীরের অভ্যন্তরে একদিকে যেমন ভিটামিন এ এবং ই-এর ঘাটতি পূরণ হয়, তেমনি অ্যান্টি-অ্যাক্সিডেন্টের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পুষ্টির ঘাটতি দূর হওয়ার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
এতে থাকা ওমেগা-৬ ও ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সক্রিয় রাখে যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এই পুষ্টি উপাদান ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমারের মতো মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
অনেকেই ভাবেন ঘি খেলে ওজন বাড়ে। এই ধারণা একদমই ভুল। গবেষণায় দেখা গেছে, এতে থাকা এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ঝড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে।
ঘি-তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। যা আমাদের হাড় ও জয়েন্টের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া, ঘি খেলে একধরণের হরমোন নিঃসরিত হয়, তা আমাদের জয়েন্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এতে, আর্থ্রাইটিস ও হাড়ের যেকোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে। তাই, হাড় অথবা জয়েন্টের সমস্যা থাকলে, খাদ্য তালিকায় ঘি রাখতে ভুলবেন না।
খালি পেটে ঘি খেলে শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বাড়তে থাকে, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্টের কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
ঘি-তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এ, ডি, ই এবং কে এর মত চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামি। যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
শুধু পুষ্টিগুণ বিবেচনাতেই নয়, আধুনিক সময়ে রূপচর্চার এক বিশেষ উপকরণ এই ঘি। যার সঠিক ব্যবহারে আমাদের ত্বক ও চুল হয় সতেজ ও ঝলমলে। ঘি, বেসন এবং দুধ এক সাথে মিশিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহারে চেহারার রুক্ষতা দূর হয় এবং উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
চুলের আগা ফেটে যাওয়া সমস্যা থেকে রক্ষা পেতেও ঘি অনেক উপকারি। গোসলের আগে চুলের আগায় নিয়মিত ঘি লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিলে চুলের আগা ফাটা বন্ধ হয় এবং মসৃণতা ফিরে আসে।
এত সব উপকারী দিক থাকার পরেও, ঘি খাওয়ার উপকার পেতে হলে কিছুটা সাবধানীও হতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত ঘি খেলে পরিপাকতন্ত্র কাজ করা কমিয়ে দেয়। এতে হজম সমস্যা হয়। ঘি তে যে পরিমাণ চর্বি থাকে তা স্বাভাবিক কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণে তা মাত্রাতিরিক্ত ফ্যাট জনিত সমস্যার তৈরি করে। তাই, প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণের (১-২ চা চামচ) বেশি ঘি না খাওয়াই ভালো।
ঘি শুধু রান্নায় নয়, সরাসরি কিছু খাবারের সঙ্গেও খাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই, কোন কোন খাবারের সাথে ঘি যোগ করে দৈনন্দিন খাবারকে আরও স্বাস্থ্যকর এবং মুখরোচক করে তুলতে পারেন:
গরম ভাতের সাথে ঘি: বাঙালির প্রতিটি ঘরে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। গরম ভাতের উপর এক চামচ ঘি ছড়িয়ে খেলে স্বাদ বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
রুটি ও পরোটা: সকালের নাশতায় রুটি বা পরোটা তৈরি করার সময় ঘি ব্যবহার করলে এর ঘ্রাণে খাওয়ার তৃপ্তি বাড়ে।
দুধ ও ঘি: গরম দুধের মধ্যে এক চামচ ঘি মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি শুধু শক্তি বাড়ায় না, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
ডাল ও সবজি: ঘি যোগ করে রান্না করা ডাল বা ভেজিটেবল কারি স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর হয়ে ওঠে। যা রেগুলার খাবার আইটেম হিসেবে মানাসই।
মিষ্টান্ন: খির, পায়েস, লাড্ডু, বা হালুয়া বানাতে ঘি একটি অপরিহার্য উপাদান। ঘি মিষ্টান্নের স্বাদ ও টেক্সচারকে নিখুঁত করে তোলে।
খিচুড়ি: মসুর বা মুগ ডালের খিচুড়িতে ঘি মেশালে তা হয়ে ওঠে আরো সুগন্ধি। সকল বয়সের মানুষের জন্য এটি একটি পছন্দের খাবার।
ব্রেড টোস্ট বা প্যানকেক: ঘি দিয়ে ব্রেড টোস্ট বা প্যানকেক সেঁকে নিলেও তা সুস্বাদু হয়, যা নাস্তা হিসেবে একটি ভালো আইটেম।
এক সময়, মাঠে চড়া গরু বা মহিষের দুধের স্বর থেকে আমাদের নানী-দাদীরা ঘি তৈরি করতেন নিজের হাতে। বর্তমানে তেমন খাঁটি ঘি পাওয়া কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। বাংলাদেশের পাবনায় রয়েছে গরুর উপযোগী অনুকূল আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত চারণভুমি। তাই গরুগুলো বেড়ে ওঠে সবুজ ঘাস খেয়ে, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে। ফলে এসব গরুর দুধ ও দুধে তৈরি ঘি হয় শতভাগ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
আর পাবনার গোয়ালদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এমন খাঁটি দানাদার ঘি সংগ্রহ করে ইস্টার্ন পিকেল কোম্পানি। তাই শতভাগ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ঘি পেতে অর্ডার করতে পারেন ইস্টার্ন পিকেল-এর ওয়েব সাইটে।
Share - Facebook
ঘি হজমশক্তি বাড়ায়, ওজন কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা উন্নত করে, এবং ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী। এটি ভাত, রুটি, ডাল ও মিষ্টান্নে স্বাদ বাড়ায় ও পুষ্টি যোগ করে। ঘি এর পুষ্টিগুনাগুণ পেতে পরিমিত পরিমাণে ঘি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
জলপাইয়ের টক-ঝাল-মিষ্টি আচার খুব সহজে তৈরি করা যায় এবং এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। আচার তৈরি করতে ১ কেজি জলপাই, সরিষার তেল, তেজপাতা, শুকনা মরিচ, পাঁচফোড়ন, চিনি, লবণ এবং ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।