তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা

Pickles তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা13571 Views

তেঁতুল পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। বিশেষ করে তরূণীদের খাবারের তালিকায় উপরের দিকেই পাওয়া যায় এর নাম। তবে অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়। চলুন জেনে নেই তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা।

“তেঁতুল খেলে রক্ত জ্বল হয়ে যায় অথবা তেঁতুল ব্রেনের জন্য ক্ষতিকর” - আধুনিক চিকিৎসকদের মতে এ ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। সব কিছুরই যেমন ভাল ও মন্দ আছে। তেমনি তেঁতুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুইটাই আছে। গরমে এটির খুব কদর বারে অন্য সময়ের তুলনায়। ছেলে মেয়ে উভয়ে তেতুল খেতে পারে।

তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা

নিচের বিস্তারিত আলোচনা থেকে জেনে নেই তেঁতুলের সকল প্রকারের স্বাস্থ্য উপকারিতা –

১) তেঁতুল হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ 
পেট ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যার সমাধান যদি চান, তেঁতুলের সাহায্য নিন।তেঁতুলের মধ্যে টার্টারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম আছে যা কোষ্ঠন্যকাঠিন্য দূর করে। আয়ুর্বেদে এখনও তেঁতুল পাতা ডায়েরিয়া সারাতে ব্যবহার হয়। এছাড়াও তেঁতুল গাছের ছাল এবং শিকড় পেটের ব্যথা দূর করতে ব্যবহার করা হয়। 

২) ডায়বেটিস কন্ট্রোল করেঃ  
তেঁতুলের বীজ বাল্ড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রন করে ডায়বেটিস এর মাত্রা কমিয়ে রাখে। তেঁতুল রক্তে চিনির মাত্রাও ঠিক রাখে। তেঁতুলে উপস্থিত এক ধরণের এনজাইম যার নাম (alpha-amylase) রক্তে চিনির মাত্রা কমায়। 

৩) তেঁতুল ওজন কমায় : 
তেঁতুলেরয়েছে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার আবার একই সঙ্গে এটা সম্পূর্ণ ফ্যাট ফ্রি। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন তেঁতুল খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও তেঁতুলে উপস্থিত hydroxycitric acid খিদে কমায়। 

৪) পেপটিক আলসার রোধ করেঃ  
পেপটিক আলসার বেশির ভাগ সময় পেটে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে হয়। এই আলসার খুব বেদনাদায়ক। রিসার্চে দেখা গেছে তেঁতুলের বীজের গুঁড়ো নিয়মিত খেলে পেপটিক আলসার সেরে যাচ্ছে। তেঁতুলে উপস্থিত পলিফেনলিক কম্পাউন্ড আলসার সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

৫) হার্ট ঠিক রাখেঃ 
তেঁতুল খুবই হার্ট ফ্রেন্ডলি। এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভরনয়েড ব্যাড কোলেস্টেরল কমায়। আবার রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড ( এক ধরণের ফ্যাট ) জমতে দেয় না। এতে উপস্থিত উচ্চ পটাশিয়াম রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। 

৬) ক্যান্সার রোধ করেঃ 
এতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা কিডনি ফেলিওর এবং ক্যান্সার রোধ করে। 

৭) ক্ষত সারিয়ে তোলেঃ 
তেঁতুল এর পাতা এবং গাছের ছাল অ্যান্টি সেপটিক এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। এটি ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। 

৮) ত্বক উজ্জ্বল করেঃ 
এটি ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেট রে-র হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে। যাদের অ্যাকনে আছে তাদের জন্যেও উপকারী অনেক উপকারি তেঁতুল। তেঁতুলে রয়েছে হাইড্রক্সি অ্যাসিড যা ত্বকের এক্সফলিয়েশন করতেও সাহায্য করে। যার ফলে মরা কোষ উঠে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। 

৯) সর্দি কাশি সারাতে সাহায্য করেঃ 
তেঁতুলে antihistaminic properties রয়েছে। যার ফলে অ্যালার্জি হতে বাঁধা দেয়। আবার তেঁতুলে উপস্থিত ভিটামিন-C শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায়।

১০) লিভার সুরক্ষিত রাখেঃ
তেঁতুল লিভার বা যকৃতকেও সুরক্ষিত রাখে। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত তেঁতুল পাতা ব্যবহার করে উচ্চ মাত্রায় মদ্যপানের ফলে ড্যামেজড লিভার সেরে উঠেছে।

খাদ্যতালিকায় তেতুল-এর সংযোজন

তেঁতুলের টক-মিষ্টি স্বাদ অনেক ধরনের খাবারে ব্যবহার করা যায়, যা রান্নায় আনে ভিন্নতা এবং বিভিন্ন খাবারকে আরও সুস্বাদু করে তোলে। তেঁতুলের চাটনি একটি জনপ্রিয় আইটেম যা অনেক খাবারের সাইড ডিশ হিসেবে বেশ প্রচলিত। তেঁতুলের শরবত গ্রীষ্মকালে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং একটি সতেজ অনুভূতি দেয়। তেঁতুলের আচার তৈরি করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়, যা বিভিন্ন খাবারের স্বাদকে করে দ্বিগুণ।

Tamarind Pickle (তেতুলের আচার) by The Eastern Pickle Company


তেঁতুল ছোট মাছের টক রান্নায় ব্যবহৃত হয়, যা মাছের স্বাদে নতুন মাত্রা যোগ করে। এছাড়াও, তেঁতুল দিয়ে তৈরি সস বা ডিপ স্ন্যাক্স বা স্টার্টারের সাথে বেশ ভালো কম্বিনেশন তৈরি করে, যা খাবারের স্বাদে আনে ভিন্নতা।

শেষ কথা

আলোচনা থেকে জানা গেল তেঁতুল একটি প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান যা কেবল স্বাদে নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। এর টক-মিষ্টি বৈশিষ্ট্য যেমন বিভিন্ন রেসিপিতে ভিন্নতা আনে, তেমনি শরীরের নানা কার্যাবলীকে সক্রিয় রাখতে সহায়ক। তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করুন এবং সুস্থ থাকুন।

Recent Posts

Health Benefits 51 Views

আমের পুষ্টিগুনাগুণ ও উপকারিতা

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে আম শীর্ষে। ফলের রাজা আম শুধু স্বাদের জন্যই নয়, অসংখ্য পুষ্টিগুনাগুণের জন্যও বিখ্যাত। চলুন জেনে নিই আম খাওয়ার অজানা কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা।

Savory 171 Views

নিয়মিত ঘি খাওয়ার উপকারিতা

ঘি হজমশক্তি বাড়ায়, ওজন কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা উন্নত করে, এবং ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী। এটি ভাত, রুটি, ডাল ও মিষ্টান্নে স্বাদ বাড়ায় ও পুষ্টি যোগ করে। ঘি এর পুষ্টিগুনাগুণ পেতে পরিমিত পরিমাণে ঘি খাওয়ার অভ্যাস করুন।